লেকের পাড়ে জঙ্গলের শেষ সীমান্তে অলস শরীরে শুয়ে আছি।পায়ে মৃদু রোদ পড়ছে।লেখতেও কেমন অলস অলস লাগছে।
তাবু একটাই পিচ করেছি। একে সমতল জায়গা খুব ই অল্প একটুখানি, তাছাড়া এই শীতে তিনজন মানুষের জন্য দুইটা থ্রী পারসন টেন্ট পিচ করার কোনোই যৌক্তিকতাই নেই। তাই প্রথম দিন থেকেই একটা তাবুতেই গাদাগাদি করে শেয়ার করে নিচ্ছি।
কাকভোরে ঘুম দিয়ে উঠে বেশ খানিকটা হাইকিং করে ফরেস্ট অফিসের পুরোনো অব্যবহৃত ভাঙ্গা ঘরগুলো দেখতে গিয়েছিলাম। জঙ্গলেও কিছুটা এলোমেলো ঘুরে বেড়ালাম ।কি সুন্দর একটা এলাকা কিন্তু পুরোটাই এত বছর ধরে ব্যাবহৃত অবস্থায় পড়ে পড়ে নস্ট হয়ে গেলো। অথচ জনসাধারণের জন্যেও উন্মুক্ত করলো না জায়গাটা! যদিও করবেই বা কেনো, আমরাই ত আসল জঞ্জাল। যেকোনো এলাকা নস্ট করে ফেলি কত সহজেই, একটুও গায়ে লাগে না।
সংরক্ষিত এলাকা অথচ আসার পর থেকেই অসংখ্য বোতল কুড়িয়ে কুড়িয়ে ফেলেছি ডাস্টবিনে। কিসের বোতল তা আর না ই বা বলি।
যখন ক্যাম্পসাইটে ফিরে আসি তখন ও ওরা দু’জনে গভীর ঘুমে বিভোর। আজ সকালের নাস্তা ছিল নুডুলস আর বিস্কুট।
খেয়ে দেয়ে দিব্যি আয়েশ করে মুনাবির সারা দুপুর কাঠের ভেলাটা চালিয়ে লেকের এইকোনা থেকে ওই কোনা চষে বেড়িয়েছে। ফিরে আসার পর থেকে সে লেক টাকে নদী বলে চালানোর তীব্র চেস্টা চালাচ্ছে। মূল কথা বেশ বড় আর সুন্দর লেক, বাশের বৈঠা দিয়ে বাইতে ভালই কস্ট হয়েছে তার, তাই এই দুঃখ মেটাতে সে লেকটারেই নদী বানিয়ে ফেলেছে। উহু, সে মানবেই না এটা লেক। খাওয়া দাওয়া শেষে ঝগড়া করবো ভাবছি এটা নিয়ে।

আলিফ সকালে নাস্তা সেরে বেশ কয়েক কিলোমিটার হেটে বাজারে গিয়ে কিছু মশলা আর রেশন কিনে এনেছে। যদিও ডিম আনতে আবারো ভুল করেছে সে।
গতকাল একবার ভেবেছিলাম সন্ধায় ক্যাম্প ফায়ার করব, কিন্তু আশপাশের শুকনো পাতার পরিমান এত বেশী দেখে ব্যপারটা উচিত হবে বলে মনে হয়নি।কোনোভাবে যদি আগুন একটু এদিক সেদিক হয়? যে কোনো সময় একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া আমি আগুন কন্ট্রোল করা এখনো ভালোমত শিখিনি, তাই রিস্ক ই বলবো আমি।
ওহো বলাই ত হয়নি, আশপাশে কোথাও একটা শুয়োর ছিল গতকাল রাতে। বার বার শব্দ করছিলো। বেশ একটা ঝামেলার মধ্যেই পড়েছিলাম বলা যায়। আলিফের বিশালকায় লাইটটা গাছে ঝুলিয়ে পুরো ক্যম্পসাইট আলোকিত করে রেখে ঘুমিয়েছি।পুরা ৮ ঘন্টা জ্বলে গেছে এই হিউজ লাইটটা।
যাহোক,আজ রাতের রান্না চুলায় বসিয়েছি।ম্যেনু থাই স্যুপ, একটা সার্ডিং ক্যান, বিস্কিট, কফি। পেট অলরেডি ডাক দিয়ে দিয়ে ক্ষুধার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। ঢাকা থেকে আনা আমার রেশন প্রায় শেষ, কাল থেকে ওদেরটায় ভাগ বসাব।
আগামীকাল এই ক্যাম্পসাইট ছেড়ে নতুন সাইটের দিকে এগুবো।
দূরে শেয়াল ডাকছে, খস খস শব্দ করে পাতা খসে পড়ছে আশপাশের ডাল গুলো থেকে। এর মাঝে হিম ঠান্ডায় আঁটোসাটো হয়ে চুলার পাশে বসে আছি আমরা তিনজন।সামনে বিরাট এই লেক, আর তার আশপাশে যতদুর চোখ যায় খালি জঙ্গল আর জঙ্গল! আর চোখের সামনে প্যানে ফুটন্ত স্যুপ!
লেকে টর্চ মারলেই কুয়াশার ভেসে যাওয়া দেখা যাচ্ছে।
যাক না সময় যাচ্ছে যেমন…