You are currently viewing ভ্রমণে সাথে থাকুক বেস্ট পাওয়ারব্যাংক
Portable solar panel is on the beach in the sand and charges the battery of the mobile phone. use of solar energy in the wild on a desert island. Modern frameless smartphone

ভ্রমণে সাথে থাকুক বেস্ট পাওয়ারব্যাংক

একটা সময় ছিল যখন ভ্রমনপ্রিয় মানুষেরা ব্যাগে কিছু কাপড় ঢুকিয়েই ভ্রমণে বের হয়ে যেতো। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এই ভ্রমনপ্রিয় সাধারণ মানুষের চাহিদাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। এখন ভ্রমণে কাপড় চোপড়ের পাশাপাশি ব্যাগের একটা বেশ ভালো অংশ জুড়ে থাকে স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ, স্মার্টওয়াচ, নানা প্রকারের ছোট বড় ক্যামেরা, রিচার্জেবল টর্চ, ফ্যান, স্মার্টওয়াচ, ব্লোয়ার, রিমোট, ট্যান্ট লাইট সহ আরো কত শত ব্যাটারি চালিত গ্যাজেট। সারা ট্যুর জুড়ে এগুলো অনবরত ব্যাবহারের পর সেগুলোর চার্জ শেষ হয়ে গেলে এবং সেগুলো পুনরায় ব্যাবহারের প্রয়োজন হলে যে গ্যাজেটটি আপনার ফোন বা গ্যাজেটকে রিচার্জ করার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত রাখে সেটিই হলো পাওয়ারব্যাংক। শুধু যাত্রাপথেই নয়, দৈনন্দিন লোডশেডিংয়ে ফোন ও প্রয়োজনীয় রিচার্জেবল গ্যাজেট চার্জ দিতেও এর ব্যাবহার ক্রমাগত বাড়ছে। প্রথম প্রজন্মের পাওয়ারব্যাংক নিজে চার্জ নেয়া এবং চার্জ দেয়া দুটোই ছিল খুবই স্লো, কিন্তু তবুও সেটি ভ্রমণকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে পাওয়ারব্যাংকের প্রযুক্তিও। এসেছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের চার্জিং টেকনোলজি।এখন বাজার থেকে ফুটপাত, এমনকি বাসের হকারও এখন ঘুরে ঘুরে পাওয়ারব্যাংক বিক্রি করে। বাজারে এত এত পাওয়ারব্যাংকের মধ্যে আপনি কিনবেন কোনটি? সেটি নিয়েই আজকের লেখা।

Baseus Power Bank Adaman 22.5w 20000Mah PPAD000101 Metal Digital Display Quick Charge Power Bank

প্রথমেই আপনি নির্ধারণ করুন আপনার কাজের জন্য কেমন ক্যাপাসিটির ও আকারের পাওয়ারব্যাংক দরকার। বাজারে এখন ৫০০০-৮০০০০ মিলিএম্পিয়ারের পাওয়ারব্যাংক পাওয়া যাচ্ছে। ধরুন আপনি প্রতিদিন বের হওয়ার সময় ইমারজেন্সি ব্যাকআপ হিসেবে একটি পাওয়ারব্যাংক সাথে রাখতে চান, তাহলে সেটি অবশ্যই হতে হবে ৫০০০-১০০০০ মিলিএম্পিয়ারের মধ্যে, কারণ এই ক্যাপাসিটির পাওয়ারব্যাংগুলোর সাইজের কারণে আপনার পকেটে সহজেই বহনযোগ্য। আবার আপনি যদি দেশের বাইরে যান তাহলে অন্তত ২০,০০০ মিলিএম্পিয়ারের একটি বা দু’টি পাওয়ার ব্যাংক রাখুন। এভিয়েশন আইন অনুযায়ী আপনি কেবিন ব্যাগেজে সর্বোচ্চ ২৭০০০ মিলিএম্পিয়ার ক্যাপাসিটির সর্বোচ্চ দুটো পর্যন্ত পাওয়ারব্যাংক বহন করতে পারবেন। বাজারে একজেক্ট ২৭০০০ মিলিএম্পিয়ারের কোন পাওয়ারব্যাংক পাওয়া যায়না বলে আপনাকে ২০,০০০ মিলিএম্পিয়ারের পাওয়ারব্যাংক সাজেস্ট করা হচ্ছে। আর অবশ্যই বিমানে ভ্রমণকালে পাওয়ারব্যাংক সহ ব্যাটারি জাতীয় কোন আইটেম ভুলেও চেকইন ব্যাগেজে দিবেন না। আপনার সাথে থাকা কেবিন ব্যাগেজে রাখবেন। অন্যথায় চেকইন করার পরও এগুলো স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়লে আপনাকে প্লেন থেকে ডেকে এনে লাগেজ খুলিয়ে ওগুলো হাতে ধরিয়ে দিবে যার জন্য কিছু ক্ষেত্রে ফ্লাইটও বিলম্বিত হয় এবং আপনিও প্লেনের অন্যান্য যাত্রীর বিরক্তির কারণ হবেন। দেশের ভেতরে কোথাও একাধিক দিন ভ্রমণ করলে এবং আপনার গ্যাজেট যদি বেশি হয় তবে ৩০,০০০-৮০,০০০ মিলিএম্পিয়ার ক্যাপাসিটির পাওয়ারব্যাংক আপনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী ব্যাবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, যত বেশি ক্যাপাসিটি তত ভারী এবং বড় সাইজ। ৮০’০০০ মিলিএম্পিয়ার ক্যাপাসিটির একটি পাওয়ারব্যাংকের ওজন প্রায় দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

The phone is charged using a portable charger. The Power bank is connected to the phone via a cable. The girl charges her phone and drinks coffee.

এক্ষেত্রে একটি জিনিস জানিয়ে রাখা ভালো। অনেকেই মনে করেন ১০,০০০ মিলিএম্পিয়ার পাওয়ারব্যাংক মানে ৫০০০ মিলিএম্পিয়ারের একটি ব্যাটারি দুইবার চার্জ করা যাবে! ব্যাপারটি মোটেও এমন নয়। পাওয়ারব্যাংকের ক্যাপাসিটি থেকে আপনি সবসময় ২০-৩৫% পাওয়ার মাইনাস করে হিসেব করবেন। মানে পাওয়ারব্যাংকের ভেতরকার ব্যাটারিটি নিজে ১০,০০০ মিলিয়েম্পিয়ার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন থাকলেও সেটি চার্জ নেয়া ও দেয়ার মাঝে এই ২০-৩৫% পাওয়ার স্বাভাবিকভাবেই পাওয়ার লস করবে। যত ভালো পাওয়ারব্যাংক তত কম কনভার্সন লস রেইট, আর দাম তত বেশি। তারমানে ১০,০০০ মিলিএম্পিয়ার একটি পাওয়ারব্যাংক দিয়ে আপনি ৬৫০০-৮০০০ মিলিএম্পিয়ার পর্যন্ত পাওয়ার ব্যাকআপ পেতে পারেন।

এবার আসি পাওয়ারব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার চার্জিং ওয়াট নিয়ে। বাজারে এখন খুব কম ফোনই পাওয়া যায় যেগুলো ১৮ ওয়াটের কম চার্জার ইউজ করে। আধুনিক ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলো ৪০-৬৫ ওয়াট পর্যন্ত চার্জ সাপোর্ট করে এখন যেগুলো চার্জ হতে এখন এক ঘণ্টারও অনেক কম সময় লাগে। স্মার্টফোনসহ প্রতিটা রিচার্জেবল ডিভাইস চার্জিং টেকনোলজিতে এত দ্রুত পরিবর্তন আনছে যে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা ১২০ ওয়াট চার্জিং ক্যাপাসিটির ফোন আনবে যেটি ফুল চার্জ হতে সময় নিবে মাত্র ১৫-২০ মিনিট। বাজারে পাওয়ারব্যাংক ১০ ওয়াট থেকে ১০০ ওয়াট পর্যন্ত পাওয়া যায়। আমার সাজেশন থাকবে, আপনি এই মুহূর্তে অবশ্যই ২০ ওয়াটের কম ওয়াটের কোন পাওয়াব্যাংক না কেনার। এই ওয়াটের পাওয়ারব্যাংক আপনার ফোন এবং গ্যাজেটকে খুবই দ্রুত সময়ে চার্জ দিতে সক্ষম। এতে টাইপ সি পোর্ট, আইফোনের পোর্ট এবং টাইপ বি পোর্ট আছে কিনা দেখে নিন। আবার ইউএসবি চার্জিং পোর্ট কয়টি, ফাস্ট এবং স্লো উভয় চার্জিং পোর্ট আছে কিনা দেখুন। স্লো চার্জিং ইউএসবি পোর্টগুলো কালো এবং ফাস্ট চার্জিং ইউএসবি পোর্টগুলো মূলত কমলা কালারের হয়ে থাকে। স্লো ওয়াটের পোর্টগুলো আপনার ছোট স্লো চার্জ সাপোর্ট করা গ্যাজেট বা বারফোন চার্জে কাজ করবে। কারণ নানা গ্যাজেট চার্জ দিতে কখন কোন পোর্ট দরকার হয়ে যায় আপনি নিশ্চয়ই জানবেন না। তাই এইসব সব পোর্ট আছে এমন একটি পাওয়ারব্যাংক সংগ্রহ করুন। ২০ ওয়াট ছাড়াও এর বেশি ২২.৫ ওয়াট, ৩০ ওয়াট,৩৩ ওয়াট, ৩৫ওয়াট, ৬৫ ওয়াট এবং ১০০ ওয়াটের পাওয়ারব্যাংক বাজারে পাওয়া যায়।

আপনার ফোনের চার্জ নেয়ার ক্যাপাসিটি অনুযায়ী পাওয়ারব্যাংক নির্বাচন করলে সেটি আপনার ফোনকে বিদ্যুৎ দিয়ে চার্জ দেয়ার মতোই তাড়াতাড়ি চার্জ দিতে সক্ষম হবে। ধরুন আপনার ফোন ৩০ ওয়াটের চার্জ সাপোর্ট করে, তাহলে আপনি একটি ৩০ ওয়াটের পাওয়ারব্যাংকই কিনুন। যাদের সাধারণত ম্যাকবুক বা আধুনিক ল্যাপটপ আছে তারাই মূলত ৬৫ ও ১০০ ওয়াটের পাওয়ারব্যাংক কিনে থাকে, কারণ এই পাওয়ারব্যাংক দিয়ে তারা তাদের সেই ল্যাপটপও চার্জ দিতে পারে যেটা এরচেয়ে কম ওয়াটের পাওয়ারব্যাংক দিয়ে সম্ভব না। আপনার ফোন ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করলে ওয়ারলেস চার্জিং সুবিধাসহ পাওয়ারব্যাংক নিতে পারেন। ইদানিং কিছু পাওয়ারব্যাংক পাওয়া যায় যেগুলোর সাথে চারজিং ক্যাবল এটাচ করা থাকে। এগুলো ব্যাবহার করা বেশ কনভিনিয়েন্ট কারণ এগুলোর সাথে আপনাকে আলাদা করে কোন চারজিং ক্যাবল বহন করতে হচ্ছে না। আবার কিছু পাওয়ারব্যাংক পাওয়া যায় যেগুলো নিজেই পাওয়ার এডাপ্টার হিসেবে কাজ করে। মানে সেগুলোর সাথে চারজিং পিন এটাচ করা থাকে। ভ্রমণে সেটি রাতে চার্জে ক্যাবল দিয়ে ফোনের সাথে লাগিয়ে দিল প্রথমে সেটি ফোনকে চার্জ করে, তারপর নিজে ১০০% চার্জ হয়ে থাকে সকাল হতে হতে। ট্রাভেলিংয়ে এটা বেস্ট!

আরেকটি জিনিস বলে রাখা ভালো, শুধু ভালো পাওয়ারব্যাংক ব্যাবহার করলেই ফাস্ট চার্জিং সুবিধা পাবেন তা নয়। দ্রুত চার্জ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সেই ওয়াট সাপোর্ট করে তেমন একটি চারজিং ক্যাবলই ব্যাবহার করতে হবে। ফোনের বা গ্যাজেটের সাথে কোম্পানির দেয়া ক্যাবল ব্যাবহার করলে এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো সাপোর্ট পাবেন। তাছাড়া ফোনের চার্জিং ওয়াটের সাথে সাপোর্ট করে এমন ক্যাবলও বাজারে কিনতে পাবেন।

এবার বলছি এর ব্র্যান্ড নিয়ে। পাওয়ারব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে কমদামি ও নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড হলো Remax! এরপরই আসে Baseus, Xiomi, Joyroom, Usams এই ব্রান্ডগুলোই বাজারে সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। দামি পাওয়ারব্যাংক এর মধ্যে Baseus এর ৩৩ ওয়াট ও ৬৫ ওয়াটের পাওয়ারব্যাংক এবং Anker এর পাওয়ারব্যাংক আপনাকে আরামদায়ক সাপোর্ট দিবে।

এবার আসি দাম নিয়ে। বাজারে ডলার রেটের মূল্য বৃদ্ধির পর পাওয়ারব্যাংকের দাম বাজারে ১০%-৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২২.৫ ওয়াটের ১০,০০০ মিলিএম্পিয়ার পাওয়ারব্যাংক আপনি ব্র্যান্ড ও ফিচার ভেদে ১২০০-২৫০০ টাকার মধ্যে পাবেন। ২০,০০০ মিলিএম্পিয়ার পাবেন ১৬০০-৩৫০০ টাকার মধ্যে। এরকম ওয়াট এবং ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির সাথে সাথে এর দাম সর্বোচ্চ ৬০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সবকিছু বিবেচনা করে আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট মিলিয়ে নিয়ে নিন আপনার পছন্দের পাওয়ারব্যাংক যা আপনার যাত্রাপথে সাথে নিয়ে চলা ফোন এবং ইলেকট্রিক গ্যাজেটের ব্যাটারি ফুরিয়ে যাবার ভয় নিয়ে আসবে একদম শূন্যের কোঠায়।

লেখাঃ জুনায়েদ আজিম চৌধুরী। ছবিঃ ইন্টারনেট।

Leave a Reply