You are currently viewing শীতের সেরা ক্যাম্পিং স্পট

শীতের সেরা ক্যাম্পিং স্পট

ক্যাম্পিং শব্দটা মনে পড়ার সাথে সাথেই এডভেঞ্চার প্রেমীদের মনে জেগে উঠে প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে আদিম ও বুনো পরিবেশে রাত কাটানো। সমমনা কয়েকজন মিলে শহুরে পরিবেশ থেকে দূরে কোথাও গিয়ে তাবুতে রাত্রিযাপন, রান্নাবান্না, গল্প গুজব ও নানারকম কার্যক্রমের মাধ্যমে বন্য পশুপাখির আশেপাশে সময় কাটানো। এরকম একটি রাত হতে পারে সামনের দিনে ভালো থাকার রসদ। 

আমাদের দেশের আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে শীতকাল ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ সময়। শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই প্রকৃতিপ্রেমীরা ব্যাকপ্যাক কাধে নিয়ে বনে-জঙ্গলে, দ্বীপ-চরে ক্যাম্পিং’র জন্য যাত্রা শুরু করে। প্রকৃতিতে শীতকাল চলে এসেছে তাই ক্যাম্পিংয়ের জন্য এখনি উপযুক্ত সময়। ক্যাম্পিং মৌসুম শুরু হয়ে গেলেও কোথায় ক্যাম্পিং করবো এটা একটা বড় প্রশ্ন। দেশের মধ্যে যেকোনো সুন্দর জায়গাতেই ক্যাম্পিং করা যায়। নদী বা সমুদ্রের তীরে, খোলা মাঠ কিংবা ঘন জঙ্গলে যেকোনা জায়গা হতে পারে ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ। তবে প্রকৃতিগত অবস্থান, সৌন্দর্য  সহ বিভিন্ন কারনে দেশের মধ্যে কয়েকটি জায়গা ক্যাম্পিংয়ের জন্য এডভেঞ্চারপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। আলোচনা করবো এরকম ১০ টি ক্যাম্পিং স্পট নিয়ে।

নিঝুম দ্বীপ

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত নিঝুম দ্বীপ মূলত বঙ্গপসাগরের বুকে জেগে উঠা একটি দ্বীপ। হরিণের অভয়ারণ্য এই নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ নামে পরিচিত। নভেম্বর থেকে মার্চ আদর্শ সময় এই চরে ক্যাম্পিং করার। ভরা পূর্নিমার আলোয় কিংবা অমাবশ্যার রাতে আকাশ ভর্তি তারায় রাঙিয়ে দেবে আপনার ক্যাম্পিং।

মনপুরা দ্বীপ

দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই জেলা। এই জেলার অন্যতম আকর্ষণ মনপুরা দ্বীপ। শীতকালে মনপুরায় ক্যাম্পিং হতে পারে জীবনের স্বরনীয় ক্যাম্পিং। এই দ্বীপে রয়েছে হরিনের অভয়াশ্রম। মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনে রাতের বেলা তারা দেখা আর সাইকেলে দ্বীপ ঘুরে মেঘনার জলে সূর্যের ডুব দেওয়া দেখা জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

সোনাদিয়া দ্বীপ

দীর্ঘতম সৈকতের জন্য কক্সবাজার পরিচিত হলেও এই জেলায় রয়েছে প্রায় জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়া। মহেশখালী উপজেলার অন্তর্ভুক্ত ৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে অবারিত সৈকত, জলাবন, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্য যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মনে প্র্শান্তি আনবে। এই দ্বীপে ক্যাম্পিং চির স্বরনীয় হতে পারে যেকারো জন্য।

সন্দ্বীপ

দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা চট্টগ্রামে মেঘনা নদীর মোহনায় গড়ে উঠা দ্বীপ সন্দ্বীপ। ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দ্বীপের দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর উত্তরে সন্দ্বীপ চ্যানেল যা চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে। রহমতপুর বা পশ্চিম বিচে ক্যাম্পিংয়ের জন্য উপযুক্ত জায়গা। এই দ্বীপের সহজ সরল মানুষের আতিথেয়তা মন ভোলাবে যে কারো। 

আমিয়াখুম 

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচি উপজেলায় রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম সৌন্দর্যময় জলপ্রপাত আমিয়াখুম। স্বচ্ছ নীল রঙের খুমের জলের পাশে জোছনা রাতে তাবুবাস জীবনের অন্যতম স্বরনীয় হতে পারে। শুধু ক্যাম্পিং ই নয়, থানচি থেকে রেমাক্রি পর্যন্ত পররে পরতে যে সৌন্দর্য তা অতুলনীয়। তবে পাহাড়ি রাস্তায় দীর্ঘ হাটা পথ পেরিয়ে যেতে হবে এখানে।

মহামায়া লেক

চট্রগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম কৃত্রিম হৃদ মহামায়াতেও রয়েছে ক্যাম্পিংয়ের ব্যাবস্থা। 

এখানে ক্যাম্পিং’র জন্য রয়েছে প্যাকেজ পদ্ধতি। যাদের ক্যাম্পিংয়ের কোনো উপকরণ নেই তারা এখানে ক্যাম্পিং করতে পারবেন শুধুমাত্র বুকিং দিয়েই। ৪ জন থেকে ৩০ জন পর্যন্ত ক্যাম্পিংয়ের সুযোগ রয়েছে এখানে। লেকের জলে সাতার কাটা, কায়াকিং রয়েছে পাশাপাশি। 

চর কুকরী মুকরী

শীতের ক্যাম্পিংয়ের জন্য এডভেঞ্চারপ্রেমীদের অন্যতম পছন্দ চর কুকরী মুকরী। দ্বীপ জেলা ভোলার সদর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে গড়ে উঠা এই দ্বীপ দেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এই দ্বীপ থেকে।কক্সবাজার কুয়াকাটার আবহ পাওয়া যায় অনেকটা।

মারায়ন তং

মেঘের মাঝে বসতি, এই কথার বাস্তব রুপ পাবেন মারায়নতং বা মেরাইথং চূড়ায় ক্যাম্পিং কালে। বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার মিরিঞ্জা রেঞ্জে অবস্থিত প্রায় ১৬০০ ফুট উচ্চতার এই চূড়ায় ক্ষনিকে ক্ষনিকে মেঘ এসে ডুবিয়ে দেয় সব। চূড়ায় দাঁড়িয়ে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সর্পিল মাতামুহুরির সৌন্দর্য অতুলনীয়। তবে এখানে ক্যাম্পিং এর জন্য সেনাবাহিনী থেকে অনুমতি নিতে হয়। এছাড়া এই চূড়াটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়। তাই এখানে গেলে অবশ্যই সম্মান বজায় রাখবেন। 

রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যান

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত রেমা কালেঙ্গা দেশের অন্যতম বৃহত্তম বনভূমি। নানা প্রজাতির প্রানীর উপস্থিতি এই উদ্যানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শীতের রাতে কাপতে কাপতে ক্যাম্প-ফায়ারের সাথে বারবিকিউ আর লেকের সৌন্দর্য উপভোগের নেশায় ছুটে যায় প্রকৃতিপ্রেমীরা। 

কাপ্তাই লেক

দেশের সৌন্দর্যের আধার রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই লেক ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ জায়গা। স্বচ্ছ সবুজাভ জলে কুয়াশা মিশ্রিত সূর্যোদয় এক অতিপ্রাকৃত মায়াময় মোহনীয় সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। জলের আস্তরন ভেদ করে বৈঠা হাতে নৌকা বেয়ে যাওয়া মাঝীকে দেখেই কাটিয়ে দেওয়া যায় সকাল। প্রশান্তি পার্ক ও কাপ্তাই রিভার সাইড ক্যাফেতে রয়েছে ক্যাম্পিংয়ের ব্যাবস্থা। 

এছাড়াও কুতুবদিয়া, সেইন্ট মার্টিন, খাদিমনগর উদ্যান, হাজারীখিল, বেইজ ক্যাম্প বাংলাদেশ, নিওক্যাম্পারস, নাফাখুম, তিন্দু, দেবতাখুম, আড়াইহাজার, বাশবাড়িয়া, রাতারগুল, কুমিল্লার শালবন, মায়াবিনী লেক, সাতছড়ি উদ্যান সহ আরো অনেক স্পটে ক্যাম্পিং করা যায়।

দুর্গম জায়গাগুলোতে ক্যাম্পিং করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিরাপত্তর বিষয়টি জোরালো ভাবে দেখতে হবে এবং অভিজ্ঞ কাউকে সাথে নেওয়া উচিৎ। 

অনেক জায়গাতেই সুপেয় পানি ও টয়লেটের ব্যাবস্থা নেই, তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিকল্পনা করে যেতে হবে। জায়গা গুলোতে নিজেদের ব্যাবহার করা প্লাস্টিকের মোড়ক ও আবর্জনা ফেলে আসলে আর সৌন্দর্য থাকবেনা তাই অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে।

Leave a Reply